তুমি শুধুই কষ্ট পাবে – লাবণ্য শিল্পী

লাবণ্য শিল্পী

তুমি শুধুই কষ্ট পাবে

এই অবেলায়
কোকিল ডাকে
রাখালের বাঁশি বেজে ওঠে
প্রজাপতি নেচে যায়
শুকনো বকুলের বুকে।

কেনো এই ফিরে আসা?
করুণ সুরে যেনো গেয়ে ওঠে,
ফেলে আসা ভরা জীবনের কান্না।
তুমি বলো,
কেনো সূঁচের মতো
এই হৃদয়ে গেঁথে যাওয়া? কেনো?

ওগো পথিক,
তুমি ফিরে যাও কাশবনে,
ঘড়ায় তোলা জলের কাছে।
ফিরে যাও ওই কাছে
সাজানো বাগানে
দোলন চাঁপার ঘ্রাণে।

এখানে স্রোতোস্বিনী নদীতে
চর পড়েছে-
তাকে বড্ড বেশি
অচেনা মনে হবে।
তুমি নোনা জলে ভিজে উঠবে।
তুমি শুধু কষ্ট পাবে,
শুধুই কষ্ট…

অন্তর্গত – খায়রুল মোমেন স্বপন

খায়রুল মোমেন স্বপন

অন্তর্গত

দেখা হতেই জানালে-
নরকের পথে আমি বহুদূর!
তোমরা চলেছো স্বর্গ ধরে।
পেরুতে হবে মৃত্যুর সীমানা,
আপাতত একই পথ দুজনের, চলো-
গল্প করি জীবনের। এসো-
স্বপ দেখি সুন্দরের।
হাতে হাত না ই ধরি,
পাশাপাশি কিছুটা সময়-
অনন্ত বিরহে থেকে যাক কিছু
বিরল স্মৃতি!!

চল সুধাংশু পালাই – পারভেজ চৌধুরী

পারভেজ চৌধুরী
চল সুধাংশু পালাই

চল সুধাংশু পালাই
পড়ে থাক বাস্তুভিটা, স্মৃতির কড়িকাঠ
মুখরিত সবুজ,
লতাগুল্ম
বাশঝাড়
কলকল করা অরুণিতার হাসি।

পাগলামী নয় বন্ধু, পালাই এক্ষুণি

শিরশির করা ঘাড়ের দিব্যি তোকে
স্বপ্নময় হাত থেকে খসে পড়া আঙ্গুলের দোহায়
অতশত ভাবার কি আছে?
চল পালাই …

তুইতো জানিস, টগবগ করা দেহটা
হিসেব করা চাপাঁতির কোপে
রাস্তায় পরে থাকবে একদিন নিথর হয়ে
রক্তাক্ত
ক্ষত-বিক্ষত
ঘিরে ধরবে চারপাশ ব্যর্থ পুলিশ, ছকবাঁধা অনুসন্ধানী সাংবাদিক
হাহাকার ছেয়ে যাবে আকাশ বাতাস
শিশিরের মত রক্ত জমে জমে রাজপথের কংক্রিট হয়ে যাবে
অনুভবে অনুড়নে
ছেড়াখোঁড়া…
সময় নেই বন্ধু
সুধাংশু, চল পালাই

ও মাতৃভূমি, ও মৃত্যুভূমি – পারভেজ চৌধুরী

পারভেজ চৌধুরী

ও মাতৃভূমি, ও মৃত্যুভূমি

আমি কখনই আমার মাতৃভূমিকে মৃত্যুভূমি ভাবিনা ।
ভাবতেও চাইনা ।
এই রক্তজ ভূমির প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে আমার নিঃশ্বাস
প্রিয় স্বদেশে আমার আকাশ
আমি তার নির্ভার, ডানামেলা পাখি,
ভুলতে যেয়ে আরো ভালোবেসে ফেলি তাঁকে।
দিনযাপনের হিসেব নিকেষ এই মাটিতে
আমি কখনই আমার মাতৃভূমিকে মৃত্যুভূমি ভাবিনা ।

খুন হয়ে যাওয়া বন্ধুর মুখ
তাকিয়ে থাকা নিস্তেজ চোখ,
ক্ষত বিক্ষত চিত্রল স্মৃতির ত্রস্ত জনপদ
হারিয়ে যায় স্ব-কাল, বারবার
চারদিকে জ্বলে ওঠা চকচকে অন্ধকার,
কালোহাত,
রক্তপাত,
ধর্মের দূরারোগ্য বির্দীণ বাতাস
সপাং সপাং চাপাতির কোপ মগজে বিধে …
তবুও
আমি কখনই আমার মাতৃভূমিকে মৃত্যুভূমি ভাবিনা,
ভাবতেও চাইনা ।

সুগন্ধনগর – শামীম সিদ্দিকী

শামীম সিদ্দিকী
সুগন্ধনগর

একটা ট্রেনের চাকা ঘুরে গেলে গ্রামের সকাল
জন্মভূমি, প্রবল বাতাস কেটে উড়ে চলে মন
ট্রেনের দুপাশে বৃষ্টি অবিরত প্রশান্ত প্রবল
কতো মাঠ জলাশয় ফসলের মোহ কেটে কেটে
ট্রেন চলে মায়ের স্নেহের কাছে, সুগন্ধনগর
আমার ঘরের পাশে থোকা থোকা গোলাপ ফুটেছে

একটা ট্রেনের চাকা ঘুরে গেলে শান্তি পেলো মন
মাটির কোলের কাছে পুকুরের ধারে বসে থাকা
অমূল্য লগন–কতো রঙ ঘুড়ি এসে খেলা করে
দুরন্ত শৈশব। এতো নীল আকাশ দেখি না আমি
কতোকাল–দিগন্তরেখায় বনের ওপার থেকে
লাল-নীল পরী আসে না স্বপ্নের কল্পকথা নিয়ে

একটা ট্রেনের চাকা ঘুরে গেলে অগ্রহায়ণের
ধানের সুবাসভরা সোনাঝরা মাঠ হাঁড়িচাচা
ঘুঘুর কুজন, কৈ-মাগুড়-শোল মাছেদের লাফ
মায়ের সামনে বসে পীড়পিড়ি অমৃত ভোজন
ট্রেনের চলার স্বরে হুঁ হুঁ করে ভিজে ওঠে চোখ
কোথায় ছুটেছি আমি–জন্মস্থান, মায়ের আদরে!

মেঘের বাড়ি – সায়মা শারমিন

সায়মা শারমিন

মেঘের বাড়ি

একটি কবিতা লিখবে বলেছিলে,
অথবা একটি গান, হোক একটি এলোমেলো গদ্যাংশ..

ঝরে যাওয়া একটি বিবর্ণ পাতার মর্মর ধ্বনি,
সর্ষে ফুলের মাঝে ছোট্ট টিপ পরা বালিকার মুচকি হাসি
একটি পাহাড়ী মেয়ে,
কতগুলো সিঁড়ির ধাপ
একগুচ্ছ বকুলের মালা
শিরা-উপশিরায় প্রবাহমান টুকরো টুকরো অনুভূতি..
চিবুকে আলতো ছোঁয়া,
শান্তির পায়রাদের বিচরণ…

পূর্ণ হোক
তোমার কবিতার শান্ত শব্দমালা…

ডায়েরীর পাতাগুলো তেমনই থাকুক,যেমন আছে..
ধুলোবালি জমুক পুরনো শব্দগুলোয়,
মলিন,স্যাঁতসেঁতে জানালায় শিউলির গন্ধ নেই।

রঙীন পর্দায় আড়ালের গান বাজুক
গাংচিলের পথ ধরে ছন্দ খুঁজে নিও
মেঘের বাড়ির সাথে হবে সুর বিনিময়।

নাটাই – মহিব পিয়াস

মহিব পিয়াস

নাটাই

খুব ছোট বেলায় আমি যখন ঘুড়ি উড়াতাম

একদিন আমি ঘুড়ি উড়াচ্ছিলাম
আমার ঘুড়ি যখন আকাশে অনেক উপরে
হঠাৎ শুনতে পেলাম ঘুড়ি বলছে
সুতো কেটে দাও সুতো কেটে দাও
দিলাম সুতো কেটে………..

সত্যি, মনোমুগ্ধকর ভঙ্গিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি… – খালেদ হোসাইন

খালেদ হোসাইন

সত্যি, মনোমুগ্ধকর ভঙ্গিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি…

কোনো অন্যায়ই আমাদের বিবেককে আর স্পর্ধিত করে না
কারণ, তাকে আমরা ধোপার মতো আছড়ে,
কামারের মতো থেঁতলে, কসাইয়ের মতো কুপিয়ে হত্যা করতে পেরেছি।

এখন আগুনে আর আলো নেই, কাঙ্ক্ষিত উষ্ণতা নেই
এখন সে কেবল দগ্ধ করে মানুষ ও মনুষ্যত্ব
আর আমরা দুর্দান্তভাবে রপ্ত করতে পেরেছি আগুন নিয়ে খেলা।

লাশের পরে লাশ মাড়িয়ে আমরা এখন উল্লাসে মেতে উঠতে পারি।
ঝলসানো মুখের দৃশ্য বা আর্তনাদ বা হাহাকার
আমাদের আর কাতর করতে পারে না
সেইসব দৃশ্য পাশে সরিয়ে আমরা মেতে উঠতে পারি
মশলার গন্ধ ছড়ানো খাবার টেবিলে
অট্টহাসিতে চারপাশকে সচকিত করে তুলতে পারি
তুমুল রসিকতায়।

আমাদের মনে আর আলো নেই, কাঙ্ক্ষিত উষ্ণতা নেই
আমাদের হৃদয়ে আর কোনো মানবিক স্পন্দন নেই
আমাদের আর কোনো গন্তব্য নেই

সত্যি, মনোমুগ্ধকর ভঙ্গিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি..

আর আমাদের আকাশ বটে!- খালেদ হোসাইন

খালেদ হোসাইন

আর আমাদের আকাশ বটে!

আগুন থেকে ঝলসে ওঠে হরেক রঙের রোশনাই–
মানুষ পোড়ে মানুষ মরে
আর্তনাদ তো ঘরে ঘরে
সবই কিন্তু কপালের ফের–এতে কারো দোষ নাই।

আর আমাদের আকাশ বটে! ছড়িয়ে দেয় জ্যোৎস্নাই।

জ্যোৎস্না নাকি রক্ত ঝরে
কে আর সেসব হিসেব করে?
আমরা তো সব ঢোঁড়া এখন কালকেউটের ফোঁস নাই।

মাথার ওপর আকাশ বটে! ছড়িয়ে দেয় জ্যোৎস্নাই।

আজ আমার জ্বর আসুক – মোস্তফা মনন

মোস্তফা মনন

আজ আমার জ্বর আসুক

অনেক দিন আমার জ্বর আসে না
আমি ভুলে গেছি
জ্বর এলে আমি কেমন করি
কি চাই, কাকে চাই, কিছু খেতে চাই কি না?
জ্বর এলে আমার মাথায় কেউ পানি দিতো কি না
আমার গা মুছিয়ে দিতো কি না?
এসব কিছু আমার এখন মনে নেই।
সপ্তাহে একদনি মাথায় তেল দিতে আমার খুব ভালো লাগে
জবজবে তেল চুইয়ে চুইয়ে পড়ে আমার কপাল, চিবুক আর গাল
বাম হাত উল্টো করে সেই চিপচিপে তেল মুছে নেই মাঝে মাঝে
তাতে আমার তেমন খারাপ লাগে না।
আমার খারাপ লাগে এই যে জ্বর হলে বড্ড একা হয়ে যাই-মনে মনে
কিন্তু আমি চাই, এখন চাই
আজ আমার জ্বর আসুক
আজ আমার ভীষণ অসুখ করুক
আমি দেখতে চাই
আমার জ্বরে তুমি কতোটা পুড়াে।

০২.০৪.১৫