বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

কাক-পর্ব : এক – শামসুজ্জামান মিলকী

শামসুজ্জামান মিলকী

কাক-পর্ব : এক

কাকের কোকিল কিংবা ময়ূর হবার গল্প সবারই জানা
কাক কি চেয়ে কি পেয়েছে, তা ভেবে দেখেনি কখনও।
কাক বলেই করেছি তাকে সতর্কে না দেখার ভাণ
কাক জানে না, সে পাখির মর্যাদায় অভিষিক্ত।
আমি জানি, কোকিল হতে না পারার ব্যর্থতা তাকে কতটা কর্কশ করেছে,
আমি জানি, ময়ূর-হাঁটা রপ্ত করতে না পারার যন্ত্রণা তাকে কতটা হীনমন্য করেছে,
অথচ কাক জানে না, সময় বদলালেও বদলায় না কারও আত্ম-আচরণ।

কাক ডাকা ভোরে কখনও ঘুম ভাঙে না আমার,
তবে কাকের সঙ্গে সখ্যতা আছে আমার।

বলতে বলতে ক্লান্ত – এ্যান লিস এন্ডারসন, অনুবাদ: পারভেজ চৌধুরী

এ্যান লিস এন্ডারসন / অনুবাদ: পারভেজ চৌধুরী

বলতে বলতে ক্লান্ত

মেঘে মেঘে লিখে রাখি আমি তোমাকে ভালবাসি
সেই মেঘ ভেসে চলে যায়।
বৃক্ষে বৃক্ষে লিখে রাখি আমি তোমাকে ভালবাসি
কারা যেন কেঁটে ফেলে সব বৃক্ষ।
সমুদ্রের বেলাভূমিতে লিখে রাখি আমি তোমাকে ভালবাসি
ঢেউ এসে মুছে দেয় সব।
বাতাসে কান্না দিয়ে লিখে রাখি আমি তোমাকে ভালবাসি
চঞ্চল বাতাস সেই সবের কিছুই শুনেনা
খুব ছোট একটি চিঠি
আমি তোমাকে ভালবাসি
কোনদিন তা’ পোস্ট করা হলোনা,
পাঠানো হলোনা।

তুমিতো জানোই
তোমাকে কতটা ভালোবাসি?
হৃদয়ের মাঝে কেবলই তুমি।

শ্বেত-শুভ্র তুষার – ব্রুস মেয়ের, অনুবাদ : পারভেজ চৌধুরী

ব্রুস মেয়ের / অনুবাদ : পারভেজ চৌধুরী
শ্বেত-শুভ্র তুষার

যখন তুষারাপাত ঘটে তখন সময় কাটেনা আমার
মনে হয় চারদিকে কেবল্ই নির্জনতা ঝরে পরে
তুষারাবৃত বৃক্ষেরা শীতে নতজানু।
হিমশীতল রুমে, উষ্ণ মোজায় হাত-পা
সাদা চাঁদরে ঢাকা, শরীরে কাঁপুনী।

তাঁর মাথায় পেঁজা বরফ জমা হলে
ফুরফুরে চুলগুলি হয়ে উঠে হিরন্ময় গল্প,
রূপ যেন সময়ের এক লহমা নির্জনতা।
শব্দহীন ফিসফিসিয়ে চোখ কথা বলে অনর্গল।

তুষারাপাতের নির্জনতা নিয়ে রাতে ঘুম ভাঙ্গে
চিরচেনা তাঁর দু্ই হাত কিযে নরোম!
উষ্ণ
এ যেন অন্ধকারের আলো।

প্রথম তুষারাপাত যেন নিরবতার পতন
মোহময় গল্পটা পৃথিবী শুনে।
সময়ের ডানায় ভর করে আসে নভেম্বর
শুরু করে নতুনের আবাহন
বিষন্ন ডালপালায় জেগে উঠে সবুজ পত্রাবলী।
ডিসেম্বরের মায়াবী আকাশ
প্রথম প্রেমের ছোঁয়া
বির্স্তীন শ্বেতশুভ্র তুষারাপাতের মত
তাঁর সহাস্য মুখটা দিব্য দেখি আমার জানালায়।

আমি কি পাথর যে আমি কাঁদবো না – শামীম সিদ্দিকী

শামীম সিদ্দিকী
আমি কি পাথর যে আমি কাঁদবো না

যে আমি ভূমিতে এসেছি
গায়ে নিঃশেষে জড়িয়েছি বাতাস
ভূমির ওপর চোখ শরীর
লতা-পাতা গাছ
যে আকাশ রঙ মেঘ রংধনু নক্ষত্রখচিত
জীবন আমার
মনের মানচিত্রে থাকা মানুষের মুখ
যে প্রীতি চালিত করে
শিশুদের টলটলে চোখ
ওই ছেলেটির
মুখ মনে এলে দেখি
কেঁপে কেঁপে ভেঙে ভেঙে পড়তে থাকে
প্রতীতি চিন্তার ধ্বস
যে পৃথিবীকে জীবন বলি
লেলিহান নির্মম বিভীষিকা
ছাই হয়ে উড়ে যাচ্ছে
লালাভ আকাশ
আমি কি পাথর যে রাকিবের মুখ দেখে
তবু আমি কাঁদবো না

ভয়ে আমি কাঁপতে থাকি
শিশুহত্যালোকে
কিছুতেই শান্ত হতে পারি না জানো
অসহ্য যন্ত্রণা থাকে প্রতিটি পলকে

আমাকে কাঁদতে দেখে কেউ আমাকে ছিঁচকাঁদুনে বলো না
হয়তো ভুলেই হবে কুকুরে খায়নি আমার আত্মা ও বিবেক
কোলে না চরে স্কুলে না গিয়ে ফুলের মতো
যে শিশুটি জীবন টানতে গেলো
ওর হত্যা মানে তো
পৃথিবীটাই মরে গেছে
আহা
মরে গেছে সমস্ত মানুষ!

শিরদাঁড়া – ডেনিস লি, অনুবাদ : পারভেজ চৌধুরী

ডেনিস লি / অনুবাদ : পারভেজ চৌধুরী

শিরদাঁড়া

মা আমার শিখিয়েছে চোখ, মুখ, হাত
মা আমার দেখিয়েছে চন্দ্রিমা রাত ।
মা আমার বুঝিয়েছে সময়কে ধরা
ঢেউয়ের পর ঢেউ আছড়ে পরা।

মা আমার শিখিয়েছে হৃদয়ে ভূমি
হাইওয়ে হেঁটে যাওয়া, সাথে থাকা তুমি।
মা আমার বুঝিয়েছে ক্ষুধার জ্বালা
ঘুরেও যেতে পারে সময়ের পালা।

মা আমার শিখিয়েছে হতে দূর্বার
শিরদাড়া সোজা রেখে হাঁটা বারবার।
মা আমার শিখিয়েছে মন এবং ঘর
কখনও জল হতে কখনও পাথর।

সবকিছু ছেড়ে এসেছি – ক্যাথেরিন গ্রাহাম, অনুবাদ : পারভেজ চৌধুরী

ক্যাথেরিন গ্রাহাম / অনুবাদ : পারভেজ চৌধুরী

সবকিছু ছেড়ে এসেছি

আমি ফিরে যেতে চাই আমার সূবর্ণ দ্বীপে ।
ফিরে যাবো আমার ঘর-বাড়ীতে,
সমুদ্র থেকে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেব।

অনেক তো পথ হাঁটা হলো
“বেলফাস্ট অন অরেঞ্জ” মার্চ এর সময়ে
তোমরা দুজন চুমুক দিচ্ছিলে চায়ে
কাপ উঠানামা করছিল
মাঝখানে ছিলো কাঁচের দেয়াল।

হৃদস্পন্দন যখন বন্ধ হবে ড্রাম এর মত
আমি জানি,আরো অনেকটা যেতে হবে
সেইজন্যে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এসেছি ।

ক্যাপশন – শামীম সিদ্দিকী

শা মী ম সি দ্দি কী
ক্যাপশন

নিরুদ্দেশ হাওর জুড়ে কলকল ঢেউ নাচে মানিক রতন
দিন যাচ্ছে পানি-চিন্তায় থমকে যাচ্ছে মন
গোপনে গোপনে যদি থামে
না নামে আর উথালি পাথালি তাজা ঢল
লেলিহান লোভের দানব স্রাব দিয়ে ভরায় জঞ্জাল
যদি থকথকে পুঁজ-রক্ত বিষাক্ত তরল ঢাকে হাওর
ভাবে লোকে টাকা খাবে
পানি বাতাস ঝলমলে মাছ
বাঁশির সুরের মতো লকলকে আনাজ বিকিয়ে
ভাবে টাকার স্তূপে জলধি ভরাবে যদি
এমনই মূঢ়তা
আর ঢেউ না ওঠে মনে

সর্বান্তকরণে পিরিতে আগলাই
তাই হাওরের মিঠা পানি
এই আমি নিজেকে স্বচ্ছ জলের
সামান্য জীব বলেই যে মানি!

হয়তো তোমার পাগলামিটা কেউ দ্যাখে না – আরিফ ওবায়দুল্লাহ

আরিফ ওবায়দুল্লাহ

হয়তো তোমার পাগলামিটা কেউ দ্যাখে না

বুকের ভেতর এলোমেলো
কাউকে পোষো
হয়তো তোমার পাগলামিটা কেউ দ্যাখে না।

নতুন করে ভাবো বলে
জাপটে ধরো
রাত্রিটাকে বুকে টানো কেউ দ্যাখে না।

পায়ের উপর আলসেমিটা
আছড়ে পড়ে
শরীরটাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার নেই বাসনা।

চুলের উপর ফুলের শোভা
কেউ দ্যাখে না!
পাগলামিটা ভেতর ভেতর, মন বাসনা।

শ্রাবণ ঢলের বৃষ্টি হলো
ভাদ্র মাসে
হয়তো তোমার রাধার মন কেউ জানে না।

ঘাসের ডগায় ফড়িঙগুলোর
রঙ ছড়ানো
সবুজ জমিন উদার করে কেউ রাখে না!

বুকের ভেতর এলোমেলো
কাউকে পোষো
তোমার আঁকা ছবিখানা কেউ দ্যাখে না!

আকাশটাকে নামিয়ে এনে
বুকে ধরো
হয়তো তোমার পাগলামিটা কেউ দ্যাখে না।

পাগলি তোমার মনের হরিণ ধরবো বলে পণ করেছি – আরিফ ওবায়দুল্লাহ

আরিফ ওবায়দুল্লাহ

পাগলি তোমার মনের হরিণ
ধরবো বলে পণ করেছি

পাগলি তোমার মনের হরিণ
ধরবো বলে পণ করেছি
তোমার কাছে থাকবো বলে
একটা গহীন গাঙ খুঁড়েছি।

পাগলি তোমার বুকের ভেতর
অতল স্রোতের পথ ধরেছি
তোমার আমার ঢেউয়ের নেশা
জাগবে বলে পাল তুলেছি।

তোরে কেউ খুন করেনি! – হাসান জাকির

হাসান জাকির

তোরে কেউ খুন করেনি!

আকাশে শিকারি চিল

সীমান্তে হায়েনার আনাগোনা

চলছে হত্যার মিছিল
 
বিচােরের নামে দেখি প্রহসন
মানবতা কেঁদে মরে
ভেঙে যায় মন
 
কাঁটাতারে ঝুলছে বিবেক
ফেসবুক স্ট্যাটাসে লাইক শেয়ার
ধীরে ধীরে নিভছে আবেগ
 
ওরা বড্ড বন্ধু মোদের
বসে বসে সংখ্যা গুনি
লাশের সারি বাড়তে থাকুক
কার কী আসে-যায় শুনি
 
হতভাগী ফেলানি
তোরে কেউ খুন করেনি!